লাল চাল সেদ্ধ করবেন কিভাবে?

লাল চাল সেদ্ধ করবেন কিভাবে?

লাল চাল নিয়ে অনেকের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। কারণ এটি শুধু স্বাদের জন্য নয়, স্বাস্থ্যের দিক থেকেও অত্যন্ত উপকারী।

কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স, উচ্চ ফাইবার কনটেন্ট, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং ওজন কমাতে কার্যকরী – এই সব কারণেই লাল চাল এখন অনেকের খাবারের তালিকায় প্রাধান্য পাচ্ছে।

কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, অনেকেই সঠিকভাবে রান্না না জানার কারণে এই স্বাস্থ্যকর চালটি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ভাত শক্ত হয়, সময় বেশি লাগে, ঝরঝরে হয় না কিংবা হজমে সমস্যা করে – এমন কিছু অভিযোগের কারণে কেউ কেউ ‍এই চাল খাওয়া শুরু করেও বাদ দিচ্ছেন। কিন্তু এগুলো হয় মূলত সঠিকভাবে রান্নার পদ্ধতি না জানার কারণে।

লাল চালের ভাত সেদ্ধ হচ্ছেনা? 

তবে চিন্তা নেই, এখন থেকে এই সমস্যাগুলো আর থাকবে না। নিচের ধাপগুলো মেনে চললেই আপনি রান্না করতে পারবেন নরম, সুস্বাদু ও হজমে সহায়ক লাল চালের ভাত।

লাল চালের ভাত রান্নার সঠিক পদ্ধতি:

প্রথম ধাপ: চাল ভিজিয়ে রাখা

লাল চাল অপেক্ষাকৃত শক্ত হয় এবং এতে ফাইবারের পরিমাণ অনেক বেশি। তাই রান্নার আগে ৬-৮ ঘণ্টা অথবা সারারাত চালটি পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। ভিজিয়ে রাখার ফলে চালের ফাইবার নরম হয় এবং রান্নার সময় কমে আসে। পুরনো চাল হলে ৮-১০ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখা ভালো। 

চাইলে পানিতে এক চিমটি লবণ দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে পারেন, এতে হালকা স্বাদ চলে আসে।

দ্বিতীয় ধাপ: পানি ও চালের সঠিক অনুপাত:

বসা ভাত বা পানি সহ ভাত রান্নার জন্য আদর্শ অনুপাত হলো এক কাপ চালের জন্য তিন কাপ পানি। যদি আপনি আরও নরম ভাত চান, তবে সাড়ে তিন কাপ পানি দিন।

গরম ফুটন্ত পানি ব্যবহার করলে চাল কম ভাঙে ও রান্না আরও সুন্দর হয়।

তৃতীয় ধাপ: হালকা আঁচে রান্না:

রান্নার শুরুতে হাঁড়ির ঢাকনা দিয়ে দিন এবং চুলার আঁচ কমিয়ে রান্না করতে থাকুন। মাঝেমধ্যে নাড়া দিয়ে দেখুন পানি কতটা শুকিয়েছে।

প্রয়োজন মনে করলে এক চামচ ঘি বা সামান্য তেল দিতে পারেন, তাতে ভাত ঝরঝরে হয়।

বসা ভাত কেন?

বসা ভাত পদ্ধতি লাল চাল রান্নার জন্য সবচেয়ে ভালো, কারণ এতে চালের মাড় ফেলা হয় না। ফলে চালের ভিটামিন-বি, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক ইত্যাদি মূল্যবান খনিজ উপাদান ভাতে থেকে যায়।

তবে আপনি যদি মাড় ফেলতে চান, তাহলে এক কাপ চালে চার থেকে পাঁচ কাপ পানি ব্যবহার করুন। রান্না শেষে মাড় আলাদা করে নিন।

তবে এ মাড় ফেলে দেবেন না। লাল চালের ভাতের মাড়ে প্রচুর পুষ্টিগুণ থাকে। এই মাড় আপনি পান করতে পারেন। যারা গ্যাস্ট্রিক বা দুর্বল হজমে ভোগেন, তাদের জন্য এটি দারুণ কার্যকর। এছাড়াও ত্বক ও চুলের যত্নে এ মাড় ব্যবহার করতে পারেন।

কেন লাল চাল খাবেন :-

>> এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। 

>> পেট ভরা রাখে অনেকক্ষণ, ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে।

>> এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফেনলিক কম্পাউন্ড শরীরের কোষ সুরক্ষায় সাহায্য করে।

>> কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। 

লাল চাল রান্না হয়তো একটু সময়সাপেক্ষ, কিন্তু স্বাস্থ্য ও স্বাদের দিক থেকে লালচালই সেরা। সঠিক নিয়ম জানলে আর রান্নার ভয়ও থাকবে না। বরং আপনি উপভোগ করবেন প্রতিটি দানায় স্বাস্থ্যের ছোঁয়া। তাই আজই চেষ্টা করে দেখুন।