ঠাকুরগাঁও বিআরটিএ অফিসে অভিযানের আগে ছদ্মবেশে ছিল দুদকের টিম

May 8, 2025 - 00:22
 0  1
ঠাকুরগাঁও বিআরটিএ অফিসে অভিযানের আগে ছদ্মবেশে ছিল দুদকের টিম

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি। বিনা
ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদানে দালালদের মাধ্যমে ঘুষ লেনদনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ঠাকুরগাঁও সার্কেল অফিসে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযান চালিয়েছে। বুধবার (৭ মে) দুপুরে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত ঠাকুরগাঁও জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আজমির শরিফ মারজীর নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

এ সময় বিআরটিএ অফিসের সকল কার্যক্রম বন্ধ ছিল। অভিযানের সময় দুদকের কর্মকর্তারা ঠাকুরগাঁও বিআরটি'র সহকারী পরিচালক তন্ময় কুমারকে ঘুষ বাণ্যিজ্য দলালের দৌরাত্বসহ বেশকিছু অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা যাচাইয়ে প্রশ্ন করতে দেখা গেছে। পরিশেষে দুদকের পক্ষ থেকে সহকারী পরিচালক তন্ময় কুমারকে অভিযোগের বিষয়ে লিখিতভাবে জবাব দেওয়ার কথা বলা হয়।

অভিযান শেষে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত ঠাকুরগাঁও জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আজমির শরিফ মারজী জানান, দুপুরে ঠাকুরগাঁও বিআরটিএ সার্কেল অফিসে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালানো হয়েছে। আমরা কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে একটি অভিযোগের সুনির্দিষ্ট প্রেক্ষিতে আজকে অভিযানটি পরিচালনা করি। আমাদের কাছে অভিযোগ ছিল জিকজাক নামে মাঠ পর্যায়ে একটি ব্যবহারিক পরীক্ষা হয়ে থাকে। সেই পরীক্ষায় প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর কাছ ৩০০ টাকা করে আদায় করা হয় এবং যারা টাকা আগে থেকে দিয়েছে তাদের মাঠে কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয়। এমনটা যদি চলতে থাকে তাহলে আমরা আশা করছি ভবিষ্যতে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা এ ব্যাপারে বিআরটিএ'র সহকারী পরিচালক তন্ময় কুমারের কাছে জানতে চেয়েছি এটা কেন হচ্ছে? এর জবাবে তিনি একটি শোকজ লেটার মোটরযান পরিদর্শককে ইস্যু করবেন। আরেকটি অভিযোগ ছিল এ অফিসে দালালের দৌরাত্ম্য রয়েছে। সকাল থেকে আমাদের একটি টিম ছদ্মবেশে এ অফিসে অবস্থান করছিল এবং দুইজন দালালের মোবাইল নম্বর আমাদের টিম সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে। এ ফোন নম্বরগুলো এই অফিসের কারও কিনা তা আমরা খতিয়ে দেখছি।

এছাড়াও অভিযোগ ছিল ঠাকুরগাঁও সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রতে (টিটিসি) ৭০ জন প্রশিক্ষণার্থী গত তিন মাসের একটি প্রশিক্ষণে অংশ নেন এবং তাদের প্রত্যেকের কাছে ২৫০০ টাকা করে মোট ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা লাইসেন্স দেওয়া হবে মর্মে টিটিসি কর্তৃক আদায় করা হয়। তাই মোটরযান পরিদর্শকে একটি শোকজ লেটার ইস্যু করা হবে কেন তিনি পরীক্ষা ছাড়া লাইসেন্স দিলেন এবং ফিল্ডে কেন প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীর কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে নেওয়া হয়। দালালদের দিয়ে অবৈধ কাজ করা। পরীক্ষা না দিয়েও পাস করিয়ে দেওয়া হয়। এমন বিস্তর অভিযোগ ছিল বিআরটিএর বিরুদ্ধে। আইয়ুব আলী নামে এক দালাল অগচোরে চলে যাওয়ায় তাকে আইনের হাতে তুলে দিতে বিআরটিএকে বলা হয়েছে। একই সাথে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অভিযোগের জবাব দিতে বলা হয়েছে সহকারী পরিচালক তন্ময় কুমারকে।

এছাড়াও এই অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি তালিকা আমরা সংগ্রহ করেছি। কেননা দালাল চক্রের সঙ্গে এই অফিসের কেউ জড়িত আছে কিনা তা যাচাই-বাছাই করার জন্য। তারপর আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন কমিশনের কাছে দাখিল করব। পরবর্তীতে কমিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আইনানুক গ্রহণ করা হবে বলে জানানা এই কর্মকর্তা।

ঠাকুরগাঁও বিআরটিএ সার্কেল কার্যালয়ের ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আসা মুনছুর আলী অভিযোগ করে বলেন, এ অফিসে ঘুষ ছাড়া গাড়ির নতুন বা নবায়ন লাইসেন্স হয় না। তাও নিজে করতে গেলে পোহাতে হয় নানা বিড়ম্বনা। দ্বারস্থ হতে হয় দালালদের। যে কোনো কাজের ঘুষে টাকা দালালরা নির্দ্দিষ্ট হারে জমা দেন মোটরযান পরিদর্শকের কাছে। পরে ওই টাকা ভাগবাটোয়ারা হয়। দুদকের এই অভিযানকে স্বাগত জানাই। তবে এমন অভিযান আরও আগে হলে ভালো হতো। তাহলে বিআরটিএ এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আমাদের মতো মানুষদের রক্ত চুষে খেতে পারতো না।

আরেক ভুক্তভোগী আলম অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী সরকারের ক্ষমতার দাপটধারী বিআরটিএ এর সহকারী পরিচালক তন্ময় কুমার ও মোটরযান পরিদর্শক মো. শরিফুল ইসলাম এখনো বহালতবিয়তে আছেন। এরা বিআরটিএ অফিসটাকে ঘুষের কারখানা করে ফেলেছে। টাকা ছাড়া কোনো কাজ করে না। নিজেরা সামনে না এলেও কয়েকজন দালাল পুষে তারা। দালালদের মাধ্যমে মানুষের পকেট কাটছে। দুদকের উচিত ছিল এই দুইজনের কোমরে দড়ি বেঁধে তাদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া। তাদের ইন্ধনেই সব অনিয়ম হয়।

অভিযোগের বিষয়ে ঠাকুরগাঁও বিআরটিএ সার্কেল অফিসে সহকারী পরিচালক তন্ময় কুমার এর সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।

=====০০=====

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow