প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ: পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত

প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ: পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত

বিজনেস রিপোর্টার। বিনা

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস সোমবার (১২ মে) সূচকের উত্থানের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন ডিএসই ও সিএসইতে আগের কার্যদিবসের চেয়ে টাকার পরিমাণে লেনদেন কমেছে। তবে উভয় পুঁজিবাজারে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দাম বেড়েছে।

গত বুধবার (৭ মে) পুঁজিবাজারে বড় পতন হয়েছিল। তবে সেই বড় পতনে পর পুঁজিবাজার পরিস্থিতি উন্নয়নে গত রবিবার (১১ মে) সভা আহ্বান করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সভায় সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। ফলে তার হস্তক্ষেপে সোমবার পতনমুখী প্রবণতা থেকে ফের ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের পুঁজিবাজার।

গত বছরের আগস্টে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের পর পুঁজিবাজারে আলোর ঝলকানি দেখা মেলে। তবে তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতনের পরিপ্রেক্ষিত্রে অল্প কিছুদিনে স্বপ্ন ভঙ্গ হয় বিনিয়োগকারীদের।

লাগাতার পতনের হতাশাগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে আসেন, প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তারই আলোকে গত ১১ মে প্রধান উপদেষ্টার রাষ্ট্রীয় বাসভবন যমুনায় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক উপস্থিত ছিলেন।

সরকারের অংশীদারত্ব থাকা বহুজাতিক ও বড় বড় কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি ৫টি দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নির্দেশনাগুলো হলো-সরকারের মালিকানা রয়েছে এমন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোকে সরকারের শেয়ার কমিয়ে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া, বেসরকারি খাতের দেশীয় বড় কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করতে প্রণোদনাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া, স্বার্থান্বেষী মহলের কারসাজি রুখতে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এসে তিন মাসের মধ্যে পুঁজিবাজার সংস্কার করা; পুঁজিবাজারে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এবং বড় ধরনের ঋণ প্রয়োজন এমন ব‍্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব‍্যাংক ঋণ নির্ভরতা কমিয়ে পুঁজিবাজার থেকে বন্ড ও ইক্যুইটির মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহে আগ্রহী করে তোলার ব্যবস্থা নেওয়া।

প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপে সোমবার বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফেরার ইঙ্গিত লক্ষ্য করা গেছে। এদিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ১৯.২৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৪ হাজার ৯২১ পয়েন্টে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১.৬২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৭৫ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৪.৯৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮১৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
ডিএসইতে মোট ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ১৮৯টি কোম্পানির, কমেছে ১৬০টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৪৬টির।
এদিনে ডিএসইতে মোট ৩৬৪ কোটি ৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৩৬৬ কোটি ৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক আগের দিনের চেয়ে ১৪.৩৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৩৮১ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৯.১৫ পয়েন্ট বেড়ে ১৩ হাজার ৭২৩ পয়েন্টে, শরিয়াহ সূচক ০.২৬ পয়েন্ট বেড়ে ৮৮৩ পয়েন্টে এবং সিএসই ৩০ সূচক ৩৫.৬৯ পয়েন্ট কমে ১১ হাজার ৬৩৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সিএসইতে মোট ১৮২টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ৯১টি কোম্পানির, কমেছে ৭১টির এবং অপরিবর্তিত আছে ২০টির।
সিএসইতে ৭ কোটি ২৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ২১ কোটি ৬১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।
অন্যদিকে, ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ বিরতির প্রভাবে বেড়েছে এশিয়ার পুঁজিবাজার। সোমবার ভারতের সেনসেক্স সূচক ২ হাজার ৭১২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৮ হাজার ২১৬২ পযেন্টে। এদিকে পাকিস্তানের স্টক এক্সচেঞ্জের করাচি ১০০ সূচক ৯ হাজার ৫৪৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১১ হাজার ৬৭২৬ পয়েন্টে।
=====০০=====