শূন্য থেকে বস্তুকণা বানালেন বিজ্ঞানীরা
চলতি বছরের গোড়ার দিকে গ্রাফিনের অনন্য বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ একটি পরীক্ষাগারে যথেষ্ট শক্তিশালী বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। আর সেখানে শূন্য থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কণা-প্রতিকণা তৈরি হয়েছে।
আমাদের সাধারণ অভিজ্ঞতা হলো, আপনাআপনি কোনো কিছু তৈরি হয় না। তবে কোয়ান্টামের জগতে শূন্য থেকে সত্যিই কিছুর উদ্ভব সম্ভব। এতদিন বিষয়টি তত্ত্বের সীমানায় আটকে থাকলেও চলতি বছরের গোড়ার দিকে পরীক্ষাগারে প্রমাণ করেছেন একদল বিজ্ঞানী।
কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যায় বলা হয়, বস্তুহীন একটি পরিপূর্ণ শূন্য জায়গাকে সব সময়েই যথাযথ পদ্ধতিতে পরিবর্তন ঘটিয়ে অনিবার্যভাবে কিছু তৈরির উপযোগী অবস্থা সৃষ্টি করা যায়।
ফাঁকা জায়গার অতল গহ্বরে বিভিন্ন কণার সংঘর্ষ হয় এবং কখনও কখনও বাড়তি কণা-প্রতিকণার জোড়া আবির্ভূত হয়। শূন্য স্থানে একটি মেসন কণা নিয়ে কোয়ার্কটিকে অ্যান্টিকোয়ার্ক থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হলে মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায় কণা-প্রতিকণা জোড়ার একটি নতুন সেটের উদ্ভব ঘটবে। তাত্ত্বিকভাবে, যথেষ্ট শক্তিশালী ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড কোনো প্রাথমিক কণা বা প্রতিকণা ছাড়াই শূন্য থেকে নিজেই কণা ও প্রতিকণা তৈরি করতে পারে।
আগে মনে করা হতো এই প্রভাবগুলো তৈরিতে যে সর্বোচ্চ শক্তির প্রয়োজন তা শুধু উচ্চ-শক্তি কণাবিদ্যা পরীক্ষায় বা চরম জ্যোতির্পদার্থবিদ্যার পরিবেশে পাওয়া যায়। তবে চলতি বছরের গোড়ার দিকে গ্রাফিনের অনন্য বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ একটি পরীক্ষাগারে যথেষ্ট শক্তিশালী বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। আর সেখানে শূন্য থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কণা-প্রতিকণা তৈরি হয়েছে।
কোয়ান্টাম তত্ত্বের অন্যতম জনক জুলিয়ান শুইঙ্গার এখন থেকে ৭০ বছর আগেই এভাবে কণা সৃষ্টির সম্ভাবনা উল্লেখ করেছিলেন। শুইঙ্গার এফেক্ট অবশেষে পরীক্ষাগারে প্রমাণিত হয়েছে। এর মাধ্যমে জানা গেল, মহাবিশ্ব সত্যিই শূন্য থেকে কিছু তৈরি করতে সক্ষম।
মহাবিশ্ব এনার্জি, চার্জ, ভরবেগের মতো সংরক্ষণ নীতি দ্বারা পরিচালিত। এই নীতিগুলোকে বুঝতে বিজ্ঞানীরা দশকের পর দশক শূন্য থেকে কণা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন।
বিজ্ঞানীরা এর আগে বস্তুকে (ম্যাটার) অদৃশ্য করতে সক্ষম হয়েছেন, তবে শূন্য থেকে কিছু তৈরি করা সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়।
বিগ থিংকের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২২ সালের শুরুর দিকে একদল গবেষক গ্রাফিনের মতো স্বতন্ত্র পদার্থের উপাদান দিয়ে পদার্থ সৃষ্টি করার মতো যথেষ্ট পরিমাণ ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি করতে সক্ষম হন। আর সেই ফিল্ডকে কাজে লাগিয়েই গবেষকরা শূন্য থেকে তৈরি করেছেন কণা ও প্রতিকণা।
-
What's Your Reaction?