বিদেশি হলেই কি তা ভালো প্রসাধনী?

May 7, 2025 - 00:59
 0  1
বিদেশি হলেই কি তা ভালো প্রসাধনী?

লাইফ স্টাইল ডেস্ক, বিনা
আজকাল প্রায়ই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নকল কসমেটিকস কারখানার খোঁজ পাওয়া যায়। যেখানে মেলে বিশ্বের নামীদামি ব্র্যান্ডের সব প্রসাধনী। বিভিন্ন ধরনের নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে দেশেই এসব তৈরি করা হয়। আসল পণ্যের মতো দেখতে এসব প্রসাধনী ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন দোকানে। ক্রেতারা অনেক সময় না বুঝেই এসব প্রসাধনী কিনছেন এবং ব্যবহার করে ডেকে আনছেন স্বাস্থ্যঝুঁকি। নকল ও নিম্নমানের এসব প্রসাধনী ত্বক ও শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ তো হতে পারেই, ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে লিভার ও কিডনিও।

অনলাইন থেকে পণ্য কিনলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটির পরিচিতি কেমন,  প্রয়োজন অনুযায়ী তারা পণ্য কেনার রসিদ বা ওয়েবসাইটের অর্ডারের রসিদ দেখাতে পারছে কি না তা দেখে নিন
অনলাইন থেকে পণ্য কিনলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটির পরিচিতি কেমন, প্রয়োজন অনুযায়ী তারা পণ্য কেনার রসিদ বা ওয়েবসাইটের অর্ডারের রসিদ দেখাতে পারছে কি না তা দেখে নিনছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
কীভাবে বুঝবেন পণ্যটি আসল বা নকল

সাধারণ ক্রেতা কীভাবে বুঝবেন যে তিনি বিদেশি প্রসাধনীটি নকল কিনছেন? এ বিষয়ে কথা হলো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দ্য আলমসের স্বত্বাধিকারী সানজিদা আলমের সঙ্গে। যিনি পেশায় একজন চিকিৎসকও।

সাধারণত পণ্যের গায়ের বারকোড স্ক্যান করে সেটিকে আসল-নকল বলে দেওয়া সম্ভব নয়। প্রথমত, বারকোড যেহেতু অনলাইনেই পাওয়া যায়, তাই যে কেউ চাইলে নকল পণ্যেও বারকোড বসিয়ে বিক্রি করতে পারে। দ্বিতীয়ত, এমন অনেক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আছে, যারা কেবল নির্দিষ্ট দেশ বা স্থানীয় বাজারের জন্য পণ্য তৈরি করে। তারা হয়তো সেসব পণ্যের তথ্য অনলাইনে হালনাগাদই করে না। ফলে সেই দেশের স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করা পণ্যের গায়ের বারকোড যখন অন্য দেশে বসে কেউ স্ক্যান করার চেষ্টা করবে, তখন সেখানে কিছুই পাওয়া যাবে না। তাই বারকোড স্ক্যান করে আসল-নকল পণ্য চিহ্নিত করার বিষয়টি এত সহজ নয়।

সে ক্ষেত্রে আসল পণ্য চেনার উপায় কী হতে পারে—জানতে চাইলে সানজিদা আলম বলেন, ‘কোনো প্রসাধনী কেনার আগে অনলাইনে সেটি সম্পর্কে জেনে নিন। অর্থাৎ সেটির টেক্সচার কেমন, পারফরম্যান্স কেমন, প্যাকেজিংটা কেমন ইত্যাদি। কেনার সময় সেসব মিলিয়ে নিন। আবার দামের বিষয়টি মাথায় রাখুন। এখন দেশের অনেক দোকানে হুদা বিউটি, ম্যাক, এনওয়াইএক্সের কসমেটিকস অনেক কম দামে বিক্রি হয়। যে পণ্যটির দাম তাদের ওয়েবসাইটেই ৩০–৪০ ডলার, সেটি কোনোভাবেই বাংলাদেশের বাজারে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি করা সম্ভব নয়। কেউ যদি বলে সে ৯০ শতাংশ ছাড়ে কিনে এনেছে, তাহলেও সেটি অনলাইনে যাচাই করে নিন।’

এসব পণ্যের প্যাকেজিংটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে এমন সব প্যাকেজিংয়ে বিদেশি প্রসাধনী পাওয়া যায়, যেসব হয়তো মূল কোম্পানিটি কোনো দিন চোখেও দেখেনি। তাই প্যাকেজিংটাও মিলিয়ে নেওয়াও জরুরি।

অনলাইন থেকে পণ্য কিনলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটির পরিচিতি কেমন, অনলাইনে তাদের রিভিউ কেমন, প্রয়োজন অনুযায়ী তারা পণ্য কেনার রসিদ বা ওয়েবসাইটের অর্ডারের রসিদ দেখাতে পারছে কি না, দেখে নেওয়ার কথা জানালেন সানজিদা। তিনি বলেন, ‘কোনো সেলার যদি কার্গোতে করে বা স্যুটকেসে করেও পণ্য আনেন, তাহলেও তার কাছে পণ্যের রসিদ থাকবে। সন্দেহ হলে সেটা দেখতে চান। এভাবে উৎস নিশ্চিত হতে পারলে আসল পণ্য কেনা সম্ভব।’

নকল পণ্যে যেসব ক্ষতি হতে পারে
প্রতিদিন নকল পণ্য ব্যবহার করলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে লিভার ও কিডনি। দেখা দিতে পারে হরমোনের ভারসাম্যহীনতাও। সানজিদা আলম বলেন, ‘প্রসাধনী পণ্য যেসব দেশে তৈরি হয়, সেখানে নির্দিষ্ট কিছু গাইডলাইন থাকে এবং তা মেনেই পণ্যগুলো তৈরি করতে হয়। অর্থাৎ একটি প্রসাধনীতে কোন রাসায়নিক কী পরিমাণে ব্যবহার করা যাবে, তার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকে। কিন্তু যখন নকল পণ্য তৈরি হয়, তখন তো আর এসব নিয়ম মেনে চলা হয় না। ফলে দেখা যায়, বিভিন্ন রাসায়নিকের মাত্রার কোনো ঠিক থাকে না।

এসব রাসায়নিক ত্বক থেকে সরাসরি মানুষের রক্তে প্রবেশ করে। এই রক্তে মিশে যাওয়া ক্ষতিকর রাসায়নিক লিভার হয়ে কিডনিতে প্রবেশ করে। অতিরিক্ত এসব রাসায়নিক লিভার ও কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। আবার শরীরের হরমোনের মাত্রা এবং ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। ফলে হজমে সমস্যা হয়, হৃদ্রোগ বেড়ে যায়, দেখা দেয় বন্ধ্যত্বের মতো সমস্যাও।’

বাংলাদেশে সাধারণত ক্রিম, শ্যাম্পু, ফাউন্ডেশন, লিপস্টিক ও আইলাইনারের মতো প্রসাধনী বেশি নকল হয়ে থাকে। তাই এসব পণ্য কেনার ব্যাপারে বেশি সতর্ক থাকা জরুরি।

====০০=====

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow