এক দশকে ইন্টেরিয়র ডিজাইনে কী পরিবর্তন এসেছে?

May 7, 2025 - 01:00
 0  1
এক দশকে ইন্টেরিয়র ডিজাইনে কী পরিবর্তন এসেছে?

লাইফ স্টাইল ডেস্ক, বিনা
একটা সময় ইন্টেরিয়র ডিজাইন ছিল উচ্চবিত্তের শখ। এর বাইরে বাণিজ্যিক ভবন, অফিস ও রেস্তোরাঁয় দেখা যেত বিশেষ সজ্জা। এখন তো মধ্যবিত্তের ঘরেও এর উপস্থিতি। গত এক দশকে ইন্টেরিয়র জগতের হাওয়া বদল সম্পর্কে জানাচ্ছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্থাপত্যের শিক্ষক মো. নাজমুল হক নাঈম
ইন্টেরিয়র ডিজাইন মূলত কী?

ইন্টেরিয়র শব্দটি এসেছে লাতিন শব্দ থেকে, যার অর্থ ভেতর।

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডিজাইন, যার অর্থ নকশা। দুটি শব্দ মিলিয়ে ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং। এর আভিধানিক অর্থ অভ্যন্তরীণ নকশা বা অন্দরসজ্জা। অনেকেই স্পেস নষ্ট না করে অফিস বা বাসা সুসজ্জিত করতে চান।

এই ডেকোরেটেশনই ইন্টেরিয়র ডিজাইন। সাধারণ অর্থে ইন্টেরিয়র ডিজাইন বলতে অনেকে ঘর সাজানো বোঝে। বাস্তবে এটা আরো ব্যাপক অর্থে ব্যবহূত হয়। ঘর সাজানোকে ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন বলা যায়; কিন্তু ডিজাইন আরো ব্যাপক।

ডিজাইনে অনেক রকম স্ট্রাকচার ও ফর্ম থাকে, যেখানে ডেকোরেশনে থাকে শুধু সারফেস আর ম্যাটেরিয়ালের কাজ। যিনি এ কাজটি দক্ষতার সঙ্গে করে থাকেন তিনি ইন্টেরিয়র ডিজাইনার। আগে আমাদের দেশে স্থপতিরাই সাধারণত কোনো ভবন নির্মাণের পাশাপাশি তার ইন্টেরিয়র ডিজাইন করতেন। কিন্তু বর্তমানে আর্কিটেকচার ও ইন্টেরিয়র ডিজাইন পৃথকভাবে করা হচ্ছে।

পেশাগত স্বীকৃতি
গত এক দশকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ইন্টেরিয়র ডিজাইন।
আধুনিক স্থাপনার ভেতরের সৌন্দর্য বাড়ানোতে ভূমিকা রাখছেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা। এ জন্য বেড়েছে ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের চাহিদা। উন্নত ক্যারিয়ারও গড়ছেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা। অনেকেই বিবিএ, এমবিএ, অনার্স কিংবা গ্র্যাজুয়েশন করার পাশাপাশি ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ওপর শর্ট বা লং কোর্স করে নিজস্ব ইন্টেরিয়র ফার্ম দিচ্ছেন। ভবনের নান্দনিক সাজে সব রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানই এখন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার নিয়োগ দিচ্ছে।
গণ্ডি বেড়েছে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের

চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে গণ্ডিও বেড়েছে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের। অনেক খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এই ক্ষেত্রে। একসময় শুধু অফিসপ্রধানের ঘর কিংবা মিটিং রুম সাজানো হতো। এখন সেই ধারণায় পরিবর্তন এসেছে। বাড়ি, অফিস, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ব্যাংক, এমনকি বাস, ট্রেন, বিমান ও লঞ্চেও ইন্টেরিয়র ডিজাইন হচ্ছে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে গ্রাহকদের মনোযোগ আকর্ষণে ভালো ইন্টেরিয়র ডিজাইনের বিকল্প নেই। ইন্টারনেটের বদৌলতে সারা বিশ্বের সঙ্গে সহজেই মানুষ পরিচিত হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে তাদের রুচি ও চাহিদায়। ফলে আগে যেটা ছিলো শখ সেইটা প্রয়োজনে দাঁড়িয়েছে।

বাড়ছে ইন্টেরিয়র শপের সংখ্যা

ইন্টেরিয়র ডিজাইনের কাঁচামাল আমদানিনির্ভর হওয়ায় একসময় এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান কম ছিল। চাহিদা বাড়ায় অনেক নামিদামি প্রতিষ্ঠান ইন্টেরিয়র ম্যাটেরিয়ালের ব্যবসায় আসছে। ইন্টেরিয়র ডিজাইনে ব্যবহূত ওয়ালপেপার, উডেন ফ্লোর, পিভিসি ফ্লোর, আর্টিফিশিয়াল কার্পেটসহ সিলিং আসে বিদেশ থেকে। নতুন নানা পণ্য আসছে বাজারে, যা ১০ বছর আগেও চীনে বা অন্য দেশে গিয়ে আনতে হতো।

নতুন ধারার ফার্নিচার ও ডিজাইন

ফার্নিচার ব্যবহার ইন্টেরিয়রের মূল একটি অনুষঙ্গ। এখনকার ফার্নিচারের ডিজাইনে ওয়েস্টার্ন ও মডার্নিজমের প্রভাব লক্ষণীয়। গত এক দশকে দেশি ফার্নিচারের জায়গা দখল করেছে মডার্ন ডিজাইনের আসবাব। কাঠের ফার্নিচারের জায়গায় ঘরে জায়গা পাচ্ছে বোর্ড আর ম্যাটেরিয়ালে বানানো ফার্নিচার।

রং ব্যবহারে নতুন মোড়

গত এক দশকে রঙের ব্যবহারে অনেক পরিবর্তন এসেছে ইন্টেরিয়র ডিজাইনে। রঙের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নতুন নতুন টেকনোলজির উদ্ভাবন করেছে মানুষের নতুন চাহিদা মাথায় রেখে। লেকার, ডকু, ইলিউশন, প্যাটার্ন ও টেক্সচারে নানা রকম পরিবর্তন কিভাবে করা যায়, এসব নিয়ে কাজ করছে এসব প্রতিষ্ঠান। রঙের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখন ডিজাইনার নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্লায়েন্টদের সাপোর্ট দিচ্ছে ডিজাইনের কাজে, যা বছর দুই আগেও ছিল না।

লাইটিংয়ে নতুন প্রযুক্তি

আগে ডিজাইনারদের হাতে লাইটিংয়ের অপশন ছিল কম। এখন নানা রকম প্রযুক্তির লাইট আসায় সেসবের প্রভাব পড়ছে ডিজাইনে। দেশেই এখন অনেক লাইট তৈরি হচ্ছে। লাইটের যথাযথ ব্যবহার পারে নকশায় নতুন প্রাণ দিতে। ন্যাচারাল লাইটকে ইন্টেরিয়রে নিয়ে এসে প্রয়োজন মতো আর্টিফিশিয়াল লাইটের যথাযথ ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ইন্টেরিয়রের মুড তৈরিতে।

ভিজ্যুয়ালাইজেশনে নতুন প্রযুক্তি

ভিজ্যুয়ালাইজেশন হলো ডিজাইন বাস্তবে কেমন হবে দেখতে তা আগেই কম্পিউটার গ্রাফিকসের মাধ্যমে করে দেখা এবং দেখানো। আগে এই কাজ স্কেচ করে, পারসপেকটিভ এঁকে দেখানো হতো। একসময় ডিজাইনারদের হাতে শুধু অটোক্যাড, থ্রিডি ম্যাক্স ছিল রেন্ডার করে ভিজ্যুয়ালাইজেশন করার জন্য, যা অনেক সময়সাপেক্ষ ও কঠিন ছিল। গত ১০ বছরে নতুন অনেক সফটওয়্যার হাতের নাগালে আসায় এই ভিজ্যুয়ালাইজেশন অনেক সহজ হয়েছে। এসব টেকনোলজি আবার প্রতিবছর নতুন ফিচার নিয়ে আসে, যা ডিজাইনারদের আরো বাস্তবসম্মত ডিজাইন ভিজ্যুয়ালাইজেশনে সাহায্য করে।

=========০=========

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow