গবেষণা খাত হোক উন্নয়নের মূলমন্ত্র

বিনা। ডেস্ক
কোনো বিষয় বা তথ্যের বিশ্লেষণ করে উপাত্ত সংগ্রহকৃত আবিষ্কৃত ফলাফলকে গবেষণা বলা হয়ে থাকে। গবেষণা একটি বুদ্ধিবৃত্তিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া। একটি গুণগত গবেষণাপত্রের ওপর কিছু বিষয় জড়িত থাকে। যেমন :নির্মিত গবেষণাপত্রটির ব্যবহার, প্রয়োগ ও বিস্তৃতি, স্বাভাবিক দিক এবং গবেষণাটি ব্যবহারে বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি বিষয়ের ওপর একটি গবেষণার মানদণ্ড বিরাজ করে। উন্নত দেশগুলোর প্রতিটি খাত গবেষণানির্ভর। গবেষণার ওপর নির্ভর করে উন্নত দেশগুলোর শক্ত ভিত্তি স্থাপিত হয়।
গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হলো বাস্তবিক কোনো সমস্যার সমাধান করা। একটি দেশে বিভিন্ন বাস্তবিক সমস্যা রয়েছে। সময় যখন আধুনিক থেকে আধুনিকতর হচ্ছে তখন সমস্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবং সমস্যাটি দৃশ্যমান হচ্ছে। সেটা সামাজিক এবং প্রযুক্তিগত দুই ক্ষেত্রে। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য গবেষণার বিকল্প নেই। এর জন্য প্রথমত সমস্যা চিহ্নিত করে উক্ত সমস্যাকে বিশ্লেষণ করে প্রাপ্ত উদ্ভাবনী ফলাফলকে সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োগ করতে হবে। এতে গবেষণার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি গবেষণার অনুশীলনগত চর্চাও বৃদ্ধি পাবে।
একটি দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ উন্নয়ন নির্ভর করে গবেষণার ওপর। গবেষণা খাত দেশের অর্থনীতিকে করে সমৃদ্ধ এবং সামাজিক সক্ষমতাকে পরিপূর্ণতা দান করে। শিক্ষার গঠনগত পরিবর্তন, প্রসার ও মান বৃদ্ধিকরণে গবেষণার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর শক্ত ভিত্তি স্থাপনের মূল হাতিয়ার হচ্ছে সুষ্ঠু গবেষণা খাত। গবেষণা খাতকে গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমে দেশীয় অর্থনৈতিক খাতে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বৃদ্ধির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও দেশের আলাদা স্থান তৈরি করা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু গবেষণাপত্র নির্মাণ করা। পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীতে গতিশীল অর্থনৈতিক কাঠামো ব্যবস্থা নির্মাণ করতে যথাযথ গবেষণার বিকল্প নেই।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও মানবোন্নয়ন সূচকে বর্তমান বিশ্বে ইতিবাচকভাবে বহুল আলোচিত দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। এসব অর্জন ধরে রেখে সরকার ঘোষিত রূপকল্প ২০৪১ অর্জন করতে হলে গবেষণায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি করোনাপরবর্তী বিশ্ব, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ ও ডেলটা প্ল্যান ২১০০ কার্যকরের ক্ষেত্রে গবেষণা খাতকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতে হবে।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, আমাদের শিক্ষার্থীরা উন্নত বিশ্বের শিক্ষার্থীদের তুলনায় গবেষণামুখী কম। উন্নত বিশ্বের শিক্ষার্থীরা যখন গবেষণাকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, তখন আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা একাডেমিক শিক্ষাকেই গুরুত্ব বেশি প্রদান করে থাকেন। বাংলাদেশ থেকে ২০২১ সালে স্কোপাস ইনডেক্স জার্নালে প্রকাশিত প্রকাশনার সংখ্যা ১১ হাজার ৪৭২, যা কিনা আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও পাকিস্তানের চেয়ে কয়েক গুণ কম।
বিশ্বায়নের এই প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে হলে উপযুক্ত গবেষণাপত্র তৈরি করা এক প্রকার বাধ্যতামূলকই বলা যায়। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের দেশে গবেষণার পূর্ণাঙ্গ সংস্কৃতি ও আবহ এখনো গড়ে উঠেনি। কারণ আমাদের দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বড় একটি অংশ স্নাতক সম্পন্ন করার পর উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। এবং দেশে গবেষণার উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে বিদেশেই গবেষণাকর্ম করছেন শিক্ষার্থীরা। এতে প্রকৃতপক্ষে লাভবান হচ্ছে না আমাদের দেশ। তাছাড়া গবেষণার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের কতটুকু সঠিক ব্যবহার হচ্ছে, সেটিও বড় একটি প্রশ্ন।
আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদেরকে গবেষণামুখী করার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। এর জন্য শিক্ষার্থীদেরকে নিজ নিজ বিষয়ভিত্তিক গবেষণা করতে উত্সাহিত করতে হবে। গবেষণা করতে শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন কর্মশালা, সেমিনার আয়োজন করা, গবেষণাবিষয়ক স্কলারশিপ প্রদান করা এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যকার গবেষণা বিষয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা। এতে শিক্ষার্থীরা গবেষণার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবেন। তাছাড়া গবেষণা কাজে যারা নিয়োজিত সরকার কর্তৃক তাদেরকে উপযুক্ত ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে। জাতীয় বাজেটে গবেষণার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ বৃদ্ধি করতে হবে। এতে অচিরেই গবেষণার সুফল ভোগ করবে বাংলাদেশ।
লেখক: শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
What's Your Reaction?






