আকাশছোঁয়া ভালোবাসার প্রাসাদ: মুকেশ আম্বানীর ‘অ্যান্টিলিয়া’

ফিচার ডেস্ক | বিনা
মুম্বাই—ভারতের ব্যস্ততম বাণিজ্যনগরী, যেখানে কোটি মানুষের স্বপ্ন প্রতিদিন ওঠানামা করে আকাশচুম্বী ইমারতের জানালায়। ঠিক এমনই এক ইমারত, যা কেবল ভবন নয়, বরং এক স্বপ্নের দালান। নাম তার ‘অ্যান্টিলিয়া’। এটিই বিশ্বের সবচেয়ে দামী ব্যক্তিগত বাসভবনগুলোর একটি। আর এর বাসিন্দা ভারতবর্ষের সবচেয়ে বিত্তবান পরিবার—মুকেশ আম্বানী ও তাঁর প্রিয়জনেরা।
রাজপ্রাসাদের গল্প, আধুনিক শহরের বুকে
মুম্বাইয়ের অভিজাত আল্টামাউন্ট রোডে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা এই ২৭ তলা রাজপ্রাসাদটির উচ্চতা ৫৬৮ ফুট। এর প্রতিটি তলা যেন একটি একটি করে খুলে ধরে আধুনিক রাজকীয়তার আলাদা অধ্যায়। প্রায় চার লক্ষ বর্গফুট জায়গাজুড়ে নির্মিত অ্যান্টিলিয়া কোনো সাধারণ বাড়ি নয়; এটি যেন এক স্থাপত্যকাব্য, যেখানে নান্দনিকতা, প্রযুক্তি ও বিলাসের এক অনুপম সংমিশ্রণ।
বিশ্বখ্যাত স্থাপত্য সংস্থা ওয়েল অ্যান্ড পারকিন্স নির্মাণ করেছে এই বিস্ময়প্রাসাদ। প্রতিটি তলা আলাদা নকশায় নির্মিত—কোনো দুটি তলা একরকম নয়। মার্বেল, মুক্তো আর ঝকঝকে কাচের পরতে পরতে রয়েছে সূক্ষ্ম শিল্পরুচি ও আভিজাত্যের ছোঁয়া।
স্বপ্নের জীবন, একসাথে থাকার আবেগ
এই ভবনে একসঙ্গে বসবাস করেন মুকেশ আম্বানী, তাঁর স্ত্রী নীতা, পুত্র আকাশ ও পুত্রবধূ শ্লোকা, কনিষ্ঠ পুত্র অনন্ত ও তাঁর স্ত্রী রাধিকা, তাঁদের সন্তান এবং নবতিপর কোকিলাবেন আম্বানী। পরিবারের এই একত্র বসবাস অ্যান্টিলিয়াকে শুধু একটি বিলাসবহুল ভবনে সীমাবদ্ধ রাখেনি—বরং এটি হয়ে উঠেছে এক ভালোবাসার কাহিনি।
বিশেষভাবে বলা চলে, ভবনের সর্বোচ্চ ২৭ তলায় বসবাস করেন আকাশ ও তাঁর পরিবার। যেন আক্ষরিক অর্থেই ‘আকাশের কাছাকাছি’ তাঁদের ঘরবসতি।
রাজকীয় সুযোগ-সুবিধা, কল্পনার বাস্তব রূপ
অ্যান্টিলিয়ার প্রতিটি কোণে লুকিয়ে আছে বিস্ময়। এখানে রয়েছে—
-
৫০ আসনের ব্যক্তিগত প্রেক্ষাগৃহ
-
তিনটি হেলিপ্যাড
-
বিশাল পূজার মন্দির
-
সুইমিং পুল, স্পা ও বিউটি পার্লার
-
নৃত্যের স্টুডিও
-
‘স্নো রুম’, যেখানে ছাদ থেকে ঝরে কৃত্রিম তুষার
-
আইসক্রিম পার্লার—শিশুদের স্বপ্নের জায়গা
সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো—এই বিশাল ভবনে আপনি খুঁজেও পাবেন না কোনো সাধারণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র। অ্যান্টিলিয়ায় ব্যবহৃত হয়েছে বিশেষ কেন্দ্রীয় শীতাতপ ব্যবস্থা, যা কেবল পরিবেশ নয়, সংরক্ষণ করে বাড়ির দামি উপকরণ ও ফুলের সতেজতা।
সবকিছুর প্রাণ: যারা অ্যান্টিলিয়াকে সচল রাখে
এই রাজপ্রাসাদকে প্রতিদিন সচল রাখেন ৬০০ জন কর্মী। তাঁদের জন্য রয়েছে আলাদা তলা, যেখানে রয়েছে থাকা, খাওয়ার, বিশ্রাম ও বিনোদনের সুব্যবস্থা। এখানে কর্মীরাও পরিবারের সদস্যের মতো যত্ন পায়।
এমনকি, নির্মাণ শেষ হওয়ার পরেও প্রায় দেড় বছর ধরে বাস্তুশাস্ত্র ও নান্দনিকতার খুঁটিনাটি ঠিক করে তোলা হয়েছে। এখন প্রতিমাসে বিদ্যুৎ বিলই হয় প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা—তবুও অ্যান্টিলিয়া কেবল অর্থব্যয়ের এক নিদর্শন নয়, বরং এটি এক পারিবারিক স্বপ্নযাত্রার ঠিকানা।
শেষ কথায়...
অ্যান্টিলিয়া কেবল ধন-সম্পত্তির প্রতীক নয়; এটি একসঙ্গে থাকার শাশ্বত বোধ, পারিবারিক বন্ধন ও ভালোবাসার এক আকাশছোঁয়া চিত্রকাব্য। মুম্বাইয়ের হৃদয়ে এই প্রাসাদ তাই এক আধুনিক রাজবাড়ি, যেখানে প্রতিটি স্তরেই মেলে স্বপ্ন, আর প্রতিটি দরজায় খোলে ভালোবাসা।
What's Your Reaction?






