সংস্কার নিয়ে নানা ক্যাচাল, ভবিষ্যৎ অস্পষ্ট : মাসুদ কামাল

সংস্কার নিয়ে নানা ক্যাচাল, ভবিষ্যৎ অস্পষ্ট : মাসুদ কামাল

অনলাইন ডেস্ক। বিনা

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে আলোচিত ও বিতর্কিত বিষয় হয়ে উঠেছে ‘রাষ্ট্রীয় সংস্কার’। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘোষিত সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে একদিকে যেমন রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত, তেমনি জনমনে তৈরি হয়েছে সংশয়—আসলে এই সংস্কারগুলোর ভবিষ্যৎ কী?

এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল বলেছেন, ‘সংস্কারের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল একজন ব্যক্তির হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা কেন্দ্রীভূত না রেখে ভারসাম্যপূর্ণ শাসনব্যবস্থা গঠন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, প্রতিটি দল নিজের স্বার্থের বাইরে কোনো সংস্কারকে সমর্থন করতে রাজি নয়।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর হাতে সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকায় রাষ্ট্রপতির ভূমিকা প্রায় নামমাত্র।

এমন বাস্তবতায় ক্ষমতার কাঠামো পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি সংস্কারের মূল এজেন্ডা হলেও, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার স্বার্থসংঘাত বিষয়টিকে জটিল করে তুলেছে।’
‘উল্লেখযোগ্য একটি আলোচিত ইস্যু হলো সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো এমপি দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দিলে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়ে যাবে। এ নিয়ে বহুদিন ধরেই প্রশ্ন উঠছে সংসদের কার্যকারিতা ও স্বাধীনতা নিয়ে।


এই অনুচ্ছেদ বাতিল বা সংশোধনের বিষয়ে কিছু দল রাজি হলেও, অনেকের দৃষ্টিভঙ্গি এখনো জটিল।’
‘এ ছাড়া সরকার গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশন—সংবিধান, নির্বাচন, বিচারব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), মিডিয়া ও রাজনৈতিক কাঠামো নিয়ে কাজ করছে। এই কমিশনগুলো নানা প্রস্তাব দিয়েছে, যা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে মতামতের জন্য।’

এ বিষয়ে মাসুদ কামাল বলেন, ‘যারা দেশ ছেড়ে বিদেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন, তারা এখন এসে দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন—এটা কি গ্রহণযোগ্য? যারা জন্মভূমিকে ছেড়ে অন্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন, তাদের মাধ্যমে সংস্কার করা হলে সেটার গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

‘সংস্কারের অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পদ্ধতি পরিবর্তনের প্রস্তাব উঠেছে। কেউ বলছেন—জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষ থাকলে তার সদস্যরা ভোট দিক, আবার কেউ বলছেন—ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি করপোরেশন পর্যন্ত সব জনপ্রতিনিধির ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হোক। তবে এতে দলীয় প্রভাবের ভারসাম্য থাকবে কি না, সে নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।’

‘নারী সংসদ সদস্যদের সরাসরি ভোটে নির্বাচনের বিষয়েও মতানৈক্য রয়েছে। বর্তমান পদ্ধতিতে এমপিদের মাধ্যমে নারী সংসদ সদস্যদের মনোনয়ন হয়, যা পরিবর্তনের প্রস্তাব এলেও সর্বসম্মতি অর্জিত হয়নি।

রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান নিয়ে মাসুদ কামাল বলেন, ‘প্রতিটি দল তাদের সুবিধাজনক প্রস্তাব গ্রহণ করছে এবং যে প্রস্তাবে দলীয় আধিপত্য হুমকির মুখে পড়ে, সেগুলো প্রত্যাখ্যান করছে। এতে জনগণের স্বার্থ কোথাও নেই।’

সবশেষে মাসুদ কামাল বলেন, ‘এই সংস্কার প্রক্রিয়ার ফলাফল কতটা কার্যকর হবে? যদি সংস্কার করেও তা রাজনৈতিক দলগুলো মানতে না চায়, তাহলে তার কোনো বাস্তব প্রয়োগ হবে না। পরবর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে চাইলে সেগুলো বাতিল করে দিতে পারে।’
 
তার মতে, ‘নির্বাচনী ব্যবস্থা ও বিচারব্যবস্থার সংস্কারই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই দুটি কাঠামো যদি সঠিকভাবে কাজ করে, তাহলে জনগণই হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তদাতা এবং রাজনৈতিক দলগুলো গণভবনের পরিবর্তে জনভবনের চিন্তা করতে বাধ্য হবে।’